ভূমি সেবা প্রদানে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড (SLC) সর্ম্পকে
![]() |
_ভূমি সেবা প্রদানে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড (SLC)
|
চলতি
বছরের
শুরু
থেকে
এ যাবত ১০টির মতো
বড়
ধরণের
পরিবর্তন আনা
হয়েছে
ভূমি
সেবা
প্রদান
ও দাপ্তরিক কাজের মান উন্নয়নের লক্ষে,
যার
সবগুলিই আইসিটি
ও প্রযুক্তি নির্ভর। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবনগুলির মধ্যে
একটি
উল্লেখ
করা
হলো,
যেটি
অটোমেশন সিস্টেমের পরবর্তী পর্যায়
বা
ধাপ
হিসেবে
গণ্য
করা
যেতে
পারে।
ভূমি
সেবা
প্রদানে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড
(SLC)
============================
ডিজিটাইজেশন এবং অটোমেশনের সত্যিকারের সুবিধা নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড (SLC)। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে এর কার্যক্রম শুরু হবে; এ লক্ষ্যে স্মার্ট কার্ড তৈরীসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত কিছু সেবাগ্রহীতার হাতে পৌঁছে দেয়া হবে এই কার্ড,
যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে তারাঃ
ক. ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন
খ. নামজারীর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আবেদন করতে পারবেন
গ. অনুমোদিত নামজারী মামলার বিপরীতে ডিসিআর ফি প্রদান করতে পারবেন
তবে দেশের যেসব উপজেলা ও এর অধীনস্থ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে, কেবলমাত্র সেসব অফিস থেকেই স্মার্ট ল্যান্ড কার্ডের এ সুবিধাগুলি গ্রহণ করা যাবে। উল্লেখ্য, যশোর সদরসহ বর্তমানে দেশের প্রায় ৪০টির মতো উপজেলায় এই সিস্টেমটি চলমান রয়েছে।
যেভাবে কাজ করবে এটিঃ
-------------------------
যশোর সদর বা অন্য জায়গায় বসবাসরত যেসব সেবাগ্রহীতা আমাদের ভূমি অফিস থেকে নামজারী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হয়। পূর্ণ নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নম্বর, তার মালিকানাধীন আবেদনকৃত সংশ্লিষ্ট জমির তফশিলসহ পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য উক্ত সার্ভার থেকে একটি স্মার্ট কার্ড রাইটারের মাধ্যমে সরাসরি কার্ডের মেমোরি বা চিপ (Chip)এ স্থানান্তর করা হবে। সার্ভারের পাশাপাশি এটিও সেবাগ্রহীতার তথ্যভান্ডার (Database) হিসেবে কাজ করবে, যা পরস্পরের সিংক্রোনাইজেশনের মাধ্যমে প্রতিবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হবে। অর্থাৎ যতবার একজন সেবাগ্রহীতা ভূমি অফিসের সেবা গ্রহণ করবেন (ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, নামজারী, ডিসিআর ফি প্রদান ইত্যাদি), ততবারই তার যাবতীয় তথ্য অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সার্ভারে হালনাগাদ হবে, এবং ভূমি অফিসে সেটির সাথে সংযুক্ত যে কার্ড রাইটারটি থাকবে, সেটিতে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড প্রবেশ করানো হলে আপনাআপনিই ঐ কার্ডের যাবতীয় তথ্য আপডেট হয়ে যাবে। ফলে এক জায়গার সেবা অন্য যে কোনো জায়গায় বসেও গ্রহণ করা যাবে । এক কথায় বলতে গেলে, একটি এটিএম কার্ড বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড যেমন সারাদেশে সমানভাবে কাজ করে, একটি স্মার্ট ল্যান্ড কার্ডও একইভাবে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকেই ভূমি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণে সমানভাবে কার্যকর হবে।ধরা যাক, কোনো একজন সেবাগ্রহীতা যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে তার নিজ নামে কেনা জমিটির নামজারী করালেন এবং হালসন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করলেন। স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড এবং অটোমেশন সিস্টেমের ডাটাবেজে এ সংক্রান্ত প্রতিটি তথ্যই সংরক্ষিত থাকবে। এরপর তিনি বদলীজনিত বা ভিন্ন কোনো কারণে অন্য কোথাও, ধরা যাক, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে বসবাস শুরু করলেন।
পরের বছর তিনি যখন যশোর সদরে তার নিজ নামীয় জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চাইবেন, তখন শ্রীনগর উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে স্মার্ট ল্যান্ড কার্ডটি ব্যবহার করে যাবতীয় কর পরিশোধ করতে পারবেন। আর সেক্ষেত্রে তার এ সংক্রান্ত তথ্য যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসেও হালনাগাদ হবে। দাখিলা বা হার্ডকপি হালনাগাদের জন্য আপাতত যেটি করা হবে, তা হলো-ঐ কর দাতার নামীয় জমির ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের বিপরীতে তথ্য (যা অটোমেশন সিস্টেমের ডাটাবেজে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হবে) অনুসারে প্রদত্ত টাকার বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে একটি দাখিলা লেখা হবে (সহকারী কমিশনার ভূমি এটি প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন, ওয়েবসাইটেও এই তথ্য প্রদর্শিত হবে) এবং সেটি সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে জমা থাকবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেবাগ্রহীতার ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান সংক্রান্ত ঐ দাখিলার কপি নিজ তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করবেন (এজন্য ‘Payment through SLC’ নামে আলাদা একটি লকার তৈরী করা হয়েছে), যেন পরবর্তীতে যে কোনো সময়ে সেবাগ্রহীতা চাইলেই এসে সেটি নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য দাখিলা কর্তনের সাথে সাথেই সেবাগ্রহীতা তার মুঠোফোনে এ সংক্রান্ত একটি এসএমএস পাবেন এবং তিনি চাইলে (তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে) দাখিলার সংশ্লিষ্ট কপি তাকে ডাকযোগেও পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এখন ধরা যাক ঐ সেবাগ্রহীতা তার জমিটি এমন একজনের কাছে বিক্রি করলেন, যিনি নিজেও একটি স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড এর অধিকারী এবং চাঁদপুর সদরে বসবাস করেন। এমতাবস্থায় চাঁদপুর সদরে বসেই গ্রহীতা তার জমির নামজারীর আবেদন করতে পারবেন; এজন্য কেবল স্মার্ট কার্ডটি নিয়ে চাঁদপুর সদরের ভূমি অফিসে হাজির হওয়াই যথেষ্ট! দাতা এবং গ্রহীতার স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড ভূমি অফিসের নির্ধারিত রিডারে প্রবেশ করানো মাত্রই উভয়ের যাবতীয় তথ্য ভূমি অফিস পেয়ে যাবে এবং আবেদনটি চূড়ান্তভাবে মঞ্জুর হলে দাতার নামীয় জমি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যশোর সদর ভূমি অফিসের নির্ধারিত ডাটাবেজ থেকে কর্তিত হয়ে দাতার নামে স্থানান্তরিত হবে। আর ডিসিআর ফি প্রদানের বিষয়টিও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের মতোই যে কোনো ভূমি অফিস থেকে সম্পন্ন করা যাবে অতি সহজে।
যেহেতু পুরো বিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে, তাই এ মুহুর্তে কেবলমাত্র যশোর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীনস্থ পৌর ভূমি অফিসে এটি চালু করা হবে এবং নির্বাচিত কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে এই স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড প্রদান করা হবে। পাইলটিং সফল হলে পরবর্তীতে অটোমেশন সিস্টেম চালু রয়েছে, এমন প্রতিটি উপজেলা ও তদধীন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এই স্মার্ট ল্যান্ড কার্ড কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে।